হানান হামিদ। কেরলের মেয়ে কোচির আল আসার কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। লেখাপড়া করতেই হবে। এমনই অদম্য ইচ্ছা নিয়ে রেল স্টেশনে মাছ বিক্রি করেন হানান। আর সেই খবর নিয়েই তুলকালাম সোশ্যাল মিডিয়ায়।
নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজে তুলতে রাত থাকতে বিছানা ছাড়তে হয় হানানকে। তিনটার সময় বেরিয়ে পড়তে হয় সাইকেল নিয়ে। চম্বক্করার পাইকারি মাছ বাজার থেকে কেনাকাটা সেরে অটোয় করে নিয়ে আসে কোচির থাম্মানান এলাকায়।
বাড়ি ফিরেই শুরু হয় কলেজ যাওয়ার প্রস্তুতি। লোকাল বাসে ৬০ কিলোমিটার দূরের কলেজ। সারা দিন ক্লাস করে ফিরে বাজারে মাছ বিক্রি। রাতে বাড়ি ফিরে আবার ভোর তিনটায় উঠে মাছ কিনতে যাওয়া। এটাই হামিদ হানানের ৩৬৫ দিনের রোজনামচা।
কেন এমন জীবন হানানের? মদ্যপ বাবা অনেক দিন আগেই সংসার ছেড়ে চলে গিয়েছেন। মা মানসিক ভারসাম্যহীন। এই পরিস্থিতিতে সংসার সামলানো আর লেখাপড়া চালানোর কঠিন লড়াইটা সামলাতেই হয় হানানকে।
এই অসম্ভব লড়াকু মেয়েটি হঠাৎই একদিন চোখে পড়ে যায় কেরলের বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘মাত্রুভূমি’র একজন সাংবাদিকের। পরনে কলেজের পোশাক, মাথায় উজ্জ্বল নীল রঙের টুপি, হাসিখুশি সুন্দরী মেয়েটি মূর্তিমতী ব্যতিক্রম ছিল ওই মেছোহাটায়। অসাধারণ এই জীবনের কথা ছাপা হয় মাত্রুভূমিতে এবং এক সকালেই কেরল জুড়ে বিখ্যাত হয়ে যায় হানান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় ওর গল্প। অসংখ্য শুভেচ্ছা আসতে থাকে, আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও।
হানানের সিনেমায় অভিনয় করার স্বপ্নের কথা জেনে অরুণ গোপী নামে এক নবীন পরিচালক নিজের পরের ছবিতে হানানকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। সেই সূত্রে জানা যায়, হানান এর আগে সিনেমায় ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় ছাড়াও অ্যাঙ্কারিং করেছে, ডাবিংয়ের কাজ করেছে, এমনকি এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, ফটকে দঁাড়িয়ে অতিথিদের ফুল দেওয়ার কাজও করেছে।
মাত্রুভূমি টিভি–তে সেই খবর দেখানোর পর আরও হইচই শুরু হয় হানানকে নিয়ে, বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায়। এবার সক্রিয় হয়ে ওঠে বিরোধিতা, সমালোচনা আর কুৎসা। একদল বলতে শুরু করে, পুরোটাই নাকি বানানো। মাত্রুভূমি নিজেদের প্রচার কৌশল হিসেবে গল্পটা বানিয়েছে। হানান নাকি মাত্র তিনদিন মাছওয়ালি সেজে বাজারে বসেছিল।
এদিকে হানানকে দেখতে প্রতিদিন এত ভিড় হচ্ছিল থাম্মানাম বাজারে, এমন যানজট হচ্ছিল, যে স্থানীয় থানা হানানকে বারণ করে দিয়েছে এখন কিছুদিন বাজারে বসতে। ফলে প্রমাণ করা আরও সহজ হয়ে গেছে, যে হানান সত্যিই প্রতিদিন বাজারে বসে মাছ বেচে না। ওর ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে লোকে খুঁজে বের করেছে বিখ্যাত অভিনেতাদের সঙ্গে পুরনো সেলফি। কাজেই তীব্র, তীক্ষ্ণ সমালোচনার থেকে হানানও রেহাই পাচ্ছে না, যে ফঁাকতালে বিখ্যাত হওয়ার এই নোংরা ছকে হানান নিজেও আছে। একজন ফেসবুকে হানানের প্রোফাইল–ছবির স্ক্রিন শট দিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, ওর আঙুলে সোনার আংটি! তা হলে কীসের অভাব!
এই বিরুদ্ধতার মুখে ভেঙে পড়েছে ১৯ বছরের মেয়েটি। টিভি ক্যামেরার সামনে সজল চোখে বলেছে, আমার দরকার নেই এই প্রচার। আমাকে যঁারা যে টাকা সাহায্য হিসেবে পাঠিয়েছেন, সব আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা আছে। আমি পাইপয়সা ফেরত দিয়ে দিতে রাজি। কিন্তু এবার আমায় একা থাকতে দিন। ক্ষমা করুন, কিন্তু আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।